সোমবার, ৩০ জুন, ২০১৪

এভারিস্ট গ্যালোয়া -এক রাতের গণিতবিদ

আজ তোমাদের এমন একজন গণিতবিদের কথা বলব যার জীবনটি এত বিচিত্র যে কোনো গল্প উপন্যাস বা নাটকেও সে রকম বিচিত্র জীবন খুঁজে পাওয়া যাবে না। রূপকথার রাজপুত্রের মতো সেই প্রায় কিশোর গণিতবিদ প্রথমবার গণিতের সাথে পরিচয় হয় যখন তার বয়স ষোল এবং তার মৃত্যুর হয় যখন তার বয়স কুড়ি এবং গণিতের ওপর তার পুরো কাজগুলো লিখে রাখে মাত্র এক রাতে এবং তারপরও গণিতের জগৎ তাকে স্মরণ করে গভীর ভালোবাসায় এবং শ্রদ্ধায়।এই গণিতবিদের নাম এভারিস্ট গ্যালোয়া।
          
গণিতের সাথে গ্যালোয়ার পরিচয় হয়েছে ষোলো বছর বয়সে এবং সতেরো বছর বয়সে গণিতের জার্নালে তার প্রথম গবেষণাপত্র ছাপা হলো। সে ইকল পলিটেকনিক নামে দেশের সবচেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করলো।বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে। তাকে যে প্রশ্ন করা হলো তার উত্তরগুলো সে দিল খুব সংক্ষেপে- উপস্থিত যারা ছিল তারা সেগুলো বুঝতেই পারল না। কাজেই একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার ঘটে গেল, গ্যালোয়া ভর্তিই হতে পারল না।
তার আগ্রহ ছিল ত্রিঘাত, চতুর্ঘাত বা পঞ্চঘাত সমীকরণে। গ্যালোয়া অনেক খাটাখাটুনি করে দুটি রিসার্চ পেপার তৈরি করে সেগুলো একাডেমি অব সায়েন্সে জমা দিল। কিন্ত রাজনৈতিক কারণে গ্যালোয়ার গবেষণা গায়েব হয়ে যায়।
স্টেফানি ফেলিসি নামে প্যারিসের একজন খ্যাতনামা ডাক্তারের মেয়ের সাথে গ্যালোয়ার গভীর ভালোবাসা হয়েছে। মেয়ের বাবা পাসচু দরবনভিল এই ঘটনায় খুব রেগে গেলেন। অপমানের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে শুটিং ডুয়েলের চ্যালেঞ্জ দেন গ্যালোয়াকে ।ডুয়েলের আগের রাতে গ্যালোয়া হঠাৎ করেই বুঝতে পারল হয়তো এই রাতটিই তার জীবনের শেষ রাত।গ্যালোয়া রাত জেগে তার থিওরেমগুলো লিখতে শুরু করল। পরদিন নিষ্ঠুর পাসচুর দক্ষ হাতের গুলিতে গ্যালোয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। মাত্র বিশ বছর বয়সে সর্বকালের একজন শ্রেষ্ঠ গণিতবিদের বিচিত্র জীবনের ইতি হলো এভাবে।
তারপর দীর্ঘ দশ বছর কেটে গিয়েছে। গ্যালোয়ার জীবনের শেষ রাতে লেখা কাগজগুলো তার বন্ধু ইউরোপের বড় বড় গণিতবিদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল কিন্তু কেউ সেটা নিয়ে মাথা ঘামাননি। অস্থির গ্যালোয়ার বিচ্ছিন্ন সামঞ্জস্যহীন লেখা থেকে তার প্রকৃত মর্মোদ্ধার করা খুব সহজ ব্যাপার ছিল না।
কাগজগুলোর একটা কপি শেষ পর্যন্ত জোসেফ লিউভিলের কাছে পৌঁছাল, এই মেধাবী গণিতবিদ সেই কাগজগুলো থেকে তার প্রকৃত তথ্যগুলো বের করলেন। গ্যালোয়ার খাপছাড়া বিচ্ছিন্ন লেখাগুলো থেকে মর্মোদ্ধার করে সেগুলো তিনি দেশের সবচেয়ে সম্মানিত জার্নালে প্রকাশ করতে শুরু করলেন। পৃথিবীর গণিতবিদরা তখন সবিস্ময়ে এই তরুণ গণিতবিদের বিস্ময়কর আবিষ্কারের সাথে প্রথমবার পরিচিত হলেন। গভীর শ্রদ্ধায় এবং ভালোবাসায় তাদের মাথা নত হয়ে এলো।
এক রাতের গণিতবিদন পৃথিবীর মানুষের স্বীকৃতি এবং ভালোবাসা পেলেন, কিন্তু বড় দেরি করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন